প্রকাশিত: ২৪/০৪/২০১৮ ৪:৫৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৪৫ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এনজিও সংস্থা মুক্তি। শুধু তাই নয়, স্কুল নির্মাণসহ ওই এনজিওতে নানা পদে কর্মকর্তা ও শিক্ষক নিয়োগেও অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অপকর্মে সংস্থার প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, স্কুল নির্মাণকাজে চরম অনিয়মের চিত্র। নির্মাণের ২-৩ মাসের মাথায় স্কুলগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ফলে বৃষ্টি আর রোদ মাথায় নিয়ে সেখানে লেখাপড়া করছে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা। কুতুপালংয়ের মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, দাতা সংস্থা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় এনজিও সংস্থা মুক্তিকে বিশাল অঙ্কের ফান্ড দেয়া হয়। এরই সুবাদে এনজিও মুক্তির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় দেড়শ’টি স্কুল। যে স্কুলগুলোতে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্কুলে বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিশুদের বার্মিজ বর্ণমালাও শেখানো হচ্ছে।

সূত্র মতে, দেড়শ’ স্কুল নির্মাণে চলছে হরিলুট। পাশাপাশি চরম অভিযোগও উঠেছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার। ফলে স্কুলগুলো নির্মাণের ২-৩ মাসের মাথায় অস্তিত্ব বিপন্নের পথে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নির্মিত দেড়শ’ স্কুলের মধ্যে কয়েকটির চিহ্ন পর্যন্ত নেই বললেই চলে। এদিকে স্কুল নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তীর মুক্তির প্রধান নির্বাহী, সংশ্লিষ্ট ঠিকারদারসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্মাণ করা হয় ১৫০টি স্কুল। আর সেসব স্কুল নির্মাণের ঠিকাদারের কাজ নেয় ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া ও রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বর সালাউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। প্রতিটি স্কুল নির্মাণের জন্য বাজেট ধরা হয় ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে সাব-ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যাম্পে কর্মরত মুক্তি এনজিওর এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম ঠিকাদাররা প্রতি স্কুল থেকে যে ২৯ হাজার টাকা করে লাভ করেছে, সেখান থেকে মূল ঠিকাদার পান ১০ হাজার, মুক্তির প্রধান নির্বাহী ১০ হাজার এবং স্থানীয়ভাবে (প্রভাবশালী ব্যক্তিদের) বাকি টাকা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার দীপক বড়ুয়া বলেন, এগুলো পারিপার্শ্বিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলের ইন্ধন। মূলত আমাকে (দীপক চেয়ারম্যান) হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই এই অপপ্রচার। স্কুল নির্মাণে দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন। সরেজমিন কুতুপালংয়ের মধুরছড়ায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যে স্কুলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। মাত্র ২-৩ মাসের মাথায় বেড়া দিয়ে তৈরি স্কুলগুলোর বেড়ায় ফাটল ধরেছে। ফলে শিশুদের ক্লাস করতে হচ্ছে রৌদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। খবর দৈনিক যুগান্তরের

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ওই প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর শান্তনু শেখর রায় স্কুল নির্মাণে দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি না হয়ে তিনি হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, সবকিছু জানেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর। তিনি কি করেছে না করেছে জানি না। তবে দুর্নীতির বিষয়ে প্রধান নির্বাহী বলেন, শুধু তিনি নন, মুক্তির কেউই একটা টাকা কারো কাছ থেকে গ্রহণ করেনি।

পাঠকের মতামত